১
লোহার ব্রিজটার তলদেশে জল ছুঁইছুঁই করছে। আমি উবু হয়ে জলে নিজের চেহারা দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম।
ব্রিজে আমি ছাড়াও আছে আরো দশ-বারোজন মানুষ আর একটি ছাগল। বলাবাহুল্য, এতোগুলো মানুষের মধ্যে একমাত্র আমারই পানিতে নিজের চেহারা দেখার কথা মনে এলো। বাকি সকলের ঘরবাড়ি বানের জলে ভেসে গেছে, জল নেমে এলে এরা কোথায় যাবে- কেউ জানেনা। ওরা অবশ্য এতে একপ্রকার অভ্যস্তই হয়ে গেছে। প্রতিবছরই নাকি একবার তাদের এরকম ব্রিজের উপর এসে জড়ো হতে হয়, জল নেমে গেলে আবার তারা ফিরে যায়।
ফুয়াদ একটা বিড়ির পেছনে আরেকটা ধরায়। বাকি সব গেছে ভেসে, ফুয়াদ অনেক সাধনায় দেশলাই আর সিগারেটের প্যাকেটটা বাঁচিয়েছে।
একসময় সিগারেটও ফুরিয়ে গেলে পাশের গ্রামবাসীটি থেকে কিছু বিড়ি চেয়ে নিয়েছে। লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে এবার ওর দেশলাইও শেষ হবার পথে।
- এতো বিড়ি খাইসনা দোস্ত। দুইদিনেই তোর দাঁতগুলো হলুদ হয়ে গেছে। গা থেকে বিশ্রী গন্ধ বের হচ্ছে।
- হুম... বিড়ি না, বিড়ি না! দুইদিন ধরে দাঁত মাজি নাই। সেজনই বোধহয়...
দুইদিন ধরে আমিও দাঁত মাজিনি। আগামী সপ্তাহে ঢাকাতে একটা ইন্টারভিউ হবার কথা। এইচআরের লোকজন বিড়ি খেয়ে দাঁতের এ দশা করেছি, এ ভেবে না আবার ঘাড়েটাড়ে হাত দিয়ে বসে!
বিড়ির সস্তা তামাকের জন্যই কিনা ফুয়াদের নেশার মত কিছু একটা হয়েছে। ঢুলুঢুলু চোখে সে ব্রিজটায় পা ঝুলিয়ে বসে থাকে।
বানের জলের সাথে নাকি অনেক কুমীর ও ভেসে এসেছে, সাপতো আছেই। আমি শঙ্কিত চোখে সেদিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রই।
বৃষ্টি থেমেছে, সূর্যও উঠেছে। তবে বানের জল আসা বন্ধ হচ্ছেনা। আজ প্রায় দুদিন ধরে আমরা কয়টা মানুষ ব্রিজটার উপর বসে আছি। এতোগুলো মানুষ মিলে যা পারেনি, এক ছাগলই তা করে ফেলেছে। পুরো জায়গাটা জুড়ে বোটকা একটা গন্ধ। ফুয়াদ ছাগলের বৃদ্ধ মালিক ফজু মিয়াঁকে অনেক বকাঝকা করে ছাগলটাকে ব্রিজের একেবারে শেষ মাথায় নিয়ে বাঁধিয়েছে। তারপরও ছোট ছোট নাদিগুলো কিভাবে যেন পুরো ব্রিজময় ছড়িয়ে পড়েছে।
ছাগলটা এই একদিক দিয়ে সুবিধায় আছে, আমরা এতোগুলা মানুষ পড়েছিলাম বিপদে। ফজু মিয়াঁকে অবশ্য দেখলাম নির্বিকারভঙ্গিতে ছাগলটার আড়ালে বসে যেতে।
সে থেকে বাকি সবাই ছোট-বড় সারতে ওই কোনাতেই ছুটে যাচ্ছে। গত কয়েক ঘণ্টা ধরে অবশ্য কোনায় যাওয়া আসার গতিতে কিছু ভাটা পড়েছে।
দুদিন ধরে সবাই প্রায় না খেয়ে আছে। ভেতরে কিছু গেলে তবেই তো বের হয়ে আসবে।
কোন এক অলৌকিক উপায়ে ছাগলটা এখনো সমানে হেগে যাচ্ছে। ছাগল নাকি সব খেতে পারে। তা এখানে খাবার জন্য বাকি রয়েছেই বা কি, লোহার ব্রিজটা ছাড়া। আশা করি ওই মতলব ছাগলটার মাথায় আসবেনা।
দুপুর বেলায় সূর্য একেবারে মাথায় চড়ে বসলো। এক কাপরে সবাই বের হয়ে এসেছে। মাথায় দেবার জন্য এতোটুকু আড়াল ও নেই কোথাও।
একেবারে জবড়জং কন্ডিশন যাকে বলে। নিচে জল, উপরে রৌদ্র। ক্ষুধার কষ্টটা এখন আর চিড়িক মারছেনা বরং মাথায় একটা থোঁতা অনুভূতি এসে গেছে। হাতে পায়ে সার পাচ্ছিনা। জল, নীলাকাশ কিংবা অন্তরীক্ষ- সর্বত্রই প্রাণহীন প্রজাপতির মত অসংখ্য বর্ণ অণুরা ভেসে বেড়ায়। দেখতে অনেকটা বিকৃত হয়ে যাওয়া আরবি হরফের মত। মৃত্যুর পর প্রজাপতিরাও হয়তো এমন বর্ণহীন- স্লথভঙ্গিতে ভেসে বেড়ায়।
অজস্র প্রজাপতির দৃশ্যপটে হঠাৎ একটা ডিঙ্গি নৌকা ঢুকে পড়ে। আমি প্রাণপণে দুচোখ মেলে দেখতে চাই। নদীর জলে মৃদু আলোড়ন তুলে নৌকাটি এগিয়ে আসে। সে ধাক্কাতেই প্রজাপতির দল একে একে সরে পড়ে। তবে খুব বেশি কাছে এলোনা, বেশ খানিকটা দূরত্ব রেখে নৌকাটি থেমে যায়।
- রিলিফ আসছে! রিলিফ আসছে!!
- রিলিফ নয়, এ আমার দোকানের মাল। কিনে খেতে হবে।
ফুয়াদ ধীরে সুস্থে উঠে দাড়ায়, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, কিনেই খাবো। আগে কাছে তো আসো!’
নৌকার মাঝি তবুও ঠিক আশ্বস্ত হতে পারেনা – ‘ কাছে আসতে পারবোনা বাপু। তোমরা সব ভুখা মানুষ, পরে হুটোপুটি করে আমার নাওই ডুবিয়ে দেবে। তা তোমাদের কাছে টাকা পয়সা আছেতো?’
গ্রামবাসীদের মধ্য হতে চাপা চাপা গুঞ্জন শোনা যায়। ফুয়াদ সেদিকে মৃদু ইশারা করে।
- হ্যাঁ আছে, আগে কাছে তো আসো!
- কাছে আসবোনা। একজনকে নিচে নামতে বলো। আমি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে দেবো। তার আগে তোমার টাকা দেখাও।
- হমুন্দীর পোলা, রিলিফের মাল নিয়া ব্যবসা করোছ! পুরা দুনিয়া গেছে পানির তলায়, আর তুই আমরারে দোকানের মাল দেহাছ!
ক্ষুধার্ত মানুষেরা সবসময় ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়ে ফেলতে চায়। দুজন কমবয়সী যুবা জলে ঝাপিয়ে পড়ে। নৌকার মাঝি আগে থেকেই যেন ব্যাপারটা জানতো।
ক্লান্ত ক্ষুধার্ত তরুণ দুটি নৌকা পর্যন্ত পৌছাতে পারেনা, বরং তাদের তুলে আনতে আরো দুজনকে জলে নামতে হল।
২
ফুয়াদটা বরাবরই রোমান্টিক ধরনের। বড় বড় স্বপ্ন দেখে, ভাবে বিপ্লব করে ফেলবে। পড়াশোনায় মাথা খারাপ ছিলনা, তবে প্রথাগত একাডেমীক পড়াশোনাকে খুব বেশি জরুরী মনে করেনি। বাপের পেনশনের টাকার কিছু গেছে সুন্দরী বোনের বিয়েতে, বাকিটা জমির দালালেরা চেটেপুটে দিয়েছি। শুনেছি ওদের জমিটা নাকি ওদের পরে আরো দুবার বেচা হয়ে গেছে।
কোন কিছুতে সুবিধা করতে না পেরে ফুয়াদ শেষমেশ স্কুল মাস্টার হয়েছে। তার আগে অবশ্য বিপ্লবের চেষ্টায় অনেক ঘাটের জল খাওয়া হয়ে গেছে। শীতবস্ত্র নিয়ে কখনো সে গেছে উত্তরাঞ্চলে, ছিন্নমূল শিশুদের জন্য স্কুল বানিয়েছে, কখনোবা মহল্লা পরিষ্কার রাখার ব্রত নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে মজা পুকুরে।
যতদূর জানি, এ পর্যন্ত বলার মত কিছু করতে পারেনি। উত্তরাঞ্চলে সর্বস্ব বিলিয়ে ফেরার পথে ট্রেনের ভেতর সে নিজেই ঠাণ্ডায় জমে মরতে বসেছিল, স্থানীয় বখাটেরা স্কুল সবাইকে বের করে দিয়ে বসিয়েছিল গাঁজার আসর। আর শেষবার মজা পুকুরের কচুরীপানায় পা জড়িয়ে তো ডুবতেই বসেছিল।
সেই ফুয়াদের সাথে দেখা করতে এসে আজ আমার নিজেরই ডুবে মরার দশা হয়েছে।
দুপুরের দিকে মাথার উপর দিয়ে দুটো হোঁৎকা দর্শন হেলিকপ্টার উড়ে চলে গেল। সবাই কিছুটা নড়ে চড়ে বসে। হেলিকপ্টার এসে গেছে, তার মানে সরকারের টনক নড়েছে।
- বুঝলি জব্বার, আমাদের স্কুলঘরটার দক্ষিণে দুটো শিশুগাছ ছিল। অনেক প্রাচীন, অনেক বড়। প্রতিদিন সকালে গাছ দুটোয় শতশত পাখি এসে জড়ো হত। আশেপাশে তো কোন জঙ্গল আর অবশিষ্ট নাই, পাখিগুলো কোথা থেকে আসতো- সেটাও একটা রহস্য। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। নিচে শিশুরা খেলে বেড়াচ্ছে, আর উপরে গাছদুটো কেন্দ্র করে কিচিরমিচির করছে এতোগুলো পাখি। গেল মাসে গ্রামের পলিটিকাল গুণ্ডাগুলা গাছদুটা কেটে ফেলে। গাছদুটা কাটার পর জায়গাটার চেহারাই পালটে গেল। শুধু চেহারাই না, আগে ওখানে একটা হালকা ভাইব ফিল করতাম। গাছদুটা কাটার পর জায়গাটা কেমন অভিশপ্ত ধরনের হয়ে গেল। পাখিগুলা তবুও আসতো, কিন্তু সেই বডি ল্যাংগুয়েজ আর ছিলনা। স্কুলের টিনের চালে সবগুলা মনমরা হয়ে বসে থাকতো, অনেকটা শোকসভার মত করে। গাছদুইটা কাটার পর এতদিন কোন বৃষ্টি হয়নাই। টানা খরার পর গতকাল বৃষ্টি হল। তা কেমন বৃষ্টি- সেতো নিজের চোখেই দেখলি।
- এতো বড় দুইটা গাছ কেটে ফেললো- তোরা কিছু করলিনা?
- আমি স্কুল কমিটির লোকজন নিয়ে গেছিলাম। গুণ্ডাগুলা ভাগ দেবে বলে ওই লোকগুলাকেও হাত করে ফেলে। গাছকাটা থামাবো কি, গাছ বেচার টাকা নিয়ে ভাগাভাগি করতে গিয়ে মারামারিই বেঁধে গেল আরেকদফা।
ফুয়াদ যেন কান্না করে ফেলবে- ‘আমি আর থাকবোনা দোস্ত এখানে, দূরে কোথাও চলে যাবো।’
- দূরে কোথায়! কই যাবি? সবখানেই তো লোভী মানুষ কেটেকুটে ছারখার করে ফেলছে।
ফুয়াদ জবাব দেয়না। ব্যগ্রভাবে চেয়ে থাকে সন্মুখপানে, যেন পরবর্তী গন্তব্যর সন্ধান করছে। কিন্তু সবযে ডুবে গেছে, এতোটুকু ডাঙ্গাও আর কোথাও নেই।
ফুয়াদ পাগলের মত বিড়বিড় করতে থাকে- ‘সব শেষ হয়ে গেল! সব শেষ হয়ে গেল!!’
৩
বিকেলের দিকে নৌকায় চড়ে এলো স্বেচ্ছাসেবীদের দল। কারো বয়সই বিশ একুশের বেশি হবেনা। বিশাল ডেকচীতে করে খিচুড়ি এনেছে, খুব বেশি অবশ্য অবশিষ্ট নেই।
কেউ হট্টগোল বাধালোনা, সারি বেঁধে বসে পড়লো সবাই। তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা নিজ হাতেই পরিবেশন করলো কলাপাতায়। ফজু মিয়া নিজে খেল, ছাগলটার জন্যও কিছু চেয়ে নিল।
যাবার সময় ফুয়াদ ভিড়ে গেল স্বেচ্ছাসেবীদের দলে। আমি ও হয়তো যেতাম, কিন্তু নৌকায় আর জায়গা অবশিষ্ট ছিলনা।
এরপর রাত নেমে এলে উদরের রাক্ষসটার যেন আবার নিদ্রাভঙ্গ হল। এতক্ষণ না খেয়েই যেন ভালো ছিলাম। একমুঠো খিচুড়িই যেন আমার অসার হয়ে যাওয়া জিভটাকে আবার সচল করে দিয়েছে।
পেটের খোঁদল, পুরো পরিপাকতন্ত্র থেকে শুরু করে প্রতিটি রক্তবিন্দু যেন কেঁপে উঠছে। ঝনঝনানির চোটে কম্পমান নিউরনগুলো কেঁপে উঠতে থাকে ক্রমাগত।
এর কিছু পরেই বের হয়ে এল কৃষ্ণতিথির চাঁদ। দাঁত খোয়ানো বৃদ্ধের মত চাঁদের সে ক্ষয়াটে চেহারা দেখে কেউ রুটির কথা ভাববেনা। এমন বীভৎসদর্শন আতংকভরা চাঁদ আমি জীবনে কখনো দেখিনি।
চারপাশ হঠাৎ নিঝুম হয়ে গেছে। কোথাও এতোটুকু সাড়া নেই। নিঃশব্দ আততায়ীর মত করেই পূবের আকাশে এসে জড়ো হয় বিপুলাকৃতির কৃষ্ণ মেঘেরা। আপাত দেখে নিরীহ মনে হলেও সে মেঘের ভেতরেই থরে থরে সাজানো রয়েছে শত ঝর্ণার জল আর বজ্রের বিপুল সম্ভার।
ঠিক তখনই আমি বুঝতে পারি, প্রজাপতির মতই মৃত্যু হয়েছে চাঁদের। মাথার উপরে যেটি ভাসছে, সেটি আসলে চাঁদের প্রেতাত্মা।
সেই প্রেতাত্মা চাঁদই পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছে আততায়ী মেঘকে। অতঃপর সে মেঘে ডুবেই ধ্বংস হবে এ পৃথিবীর।
লোহার ব্রিজটা হঠাৎ কি একটু কেঁপে উঠলো! জলেরা ফিরে আসছে, বাতাস জলজ গন্ধে একাকার। পায়ের কাছটায় কেমন যেন ভেজা একটা অনুভূতি।
- বস! বস! আপনার কাছে ছুরি আছে?
- ছুরি! ছুরি কেন ভাই?
- ছাগলটারে শোয়ামু।
আমার কাছে ছুরি নেই তবে বুকপকেটে একটা চিঠি আছে। গত পরশু লিখেছিলাম। ফুয়াদের যেমন সিগারেট-দেশলাই, আমার তেমনি এই চিঠি। দুদিন ধরে সেটি ক্রমাগত জলে কাদায় ভিজেছে। তবুও পকেট থেকে বের করিনি, ছিঁড়ে যাবে এই ভয়ে।
ব্রিজের শেষমাথায় শোরগোল শোনা যায়। বৃদ্ধ ফজু মিয়ার নাকি ছেলে নেই। প্রাণপণে সে যুবকদুটোর সাথে লড়ে যায়।
বাকি সবাই সন্ত্রস্তভাবে সেদিকে চেয়ে থাকে। এরচেয়ে ভয়াবহ একটা ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে, সেটি কেউ খেয়াল করলোনা।
আর তখনই মটমট শব্দে লোহার ব্রিজটি ভয়াবহভাবে কেঁপে উঠলো। মানুষগুলো তবুও অনড়।
ঝপাৎ করে শব্দ হয়। ফজু মিয়া জলে পড়ে গেছে। এতো কাছে, তবু ফজু মিয়া ফিরতে পারেনা, জলের ঘূর্ণিতে মুহূর্তেই তার দেহটি আড়াল হয়ে যায়। ছুরি পাওয়া যায়নি, যুবকদুটির একজন পা দিয়ে ছাগলটার গলা চেপে ধরে। মুমূর্ষু প্রাণীটি ভয়ার্ত চোখে ক্ষয়াটে চাঁদটার দিকে একবার চেয়ে দেখে।
সেদিনও একদল মানুষ গাছ বেচার টাকার ভাগাভাগি নিয়ে এমন মারপিট শুরু করে দিয়েছিল। আজও পরিস্থিতি অনেকটা সেরকম, এদিকে ক্রমশ বেড়ে চলে বানের জল।
ব্রিজটা অকস্মাৎ বিকট শব্দে হেলে পড়তেই সবার টনক নড়লো, একে অপরের দিকে সবাই চেয়ে দেখে। জল হঠাৎ করেই হাঁটু ছাড়িয়ে গেছে, দূরে কে যেন আমার নাম ধরে ডাকে। ভূতুড়ে চেহারার একটা ডিঙ্গি নৌকা খুব ধীরগতিতে এগিয়ে আসতে থাকে।
ততোক্ষণ ব্রিজটা টিকবেনা। বুকের চিঠিটা একবার ছুঁয়ে আমি জলে নেমে পড়ি। ক্ষুধাটা এখন আর টের পাচ্ছিনা, হাতে পায়ে ও জোর পাচ্ছি বেশ। কিছুতেই নৌকাটার কাছাকাছি যেতে পারিনা তবু। জলের ঘূর্ণি ক্রুদ্ধ অ্যানাকোন্ডার মত প্যাঁচ কষে আকাশ ছুঁয়ে ফেলে। সংকেত পেয়ে মেঘেরাও ঝাঁপিয়ে পড়লো সর্বশক্তি নিয়ে। এতো পাপ, এতো ক্লেদ জমেছে, এমনি এমনি কি আর সাফ হয়!
নৌকাটা এখন আর দেখা যাচ্ছেনা। বহুদূর থেকে ফুয়াদের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে- ‘আরেকটু ধরে রাখ, আরেকটু! আমি আসছি দোস্ত, আমি আসছি...’
জলের ঘূর্ণি বোধহয় আমাকে আর সে সুযোগ দেবেনা- ‘এবার আর হলোনা রে, পরেরবার যাতে ভুলগুলো আর না হয়... ’
(জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনেক হৈচৈ হচ্ছে। অনেকে রিসার্চ করে পোর্টফলিও ভারী করছেন, সেমিনার-সভা হচ্ছে। মাতবর দেশগুলোও উদারহস্তে ক্লাইমেট ফান্ড নামে পয়সা বিলাচ্ছে (যার বেশীরভাগই আবার রাজনৈতিক নেতারা খেয়ে ফেলছেন), কিন্তু আসল জায়গায় কোন কাজই হচ্ছেনা। সমদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমশ বেড়েই চলছে। যার ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ১৭% জায়গাই পানির নিচে তলিয়ে যাবে, আর ২১০০ সাল নাগাদ... থাক সেদিকে আর গেলামনা। এতো ভয়াবহ স্টাটিস্টিক্স জেনে পরে আমার গল্পটাকেই খেলো মনে হবে...)